রাহাত রিটু : বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা প্রকল্প ঝুলে রয়েছে। প্রকল্প বাতিলও করা হয়নি আবার প্রকল্পের অগ্রগতিও নেই। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা না থাকায় ওই এলাকার ইতোপূর্বেকার সংসদ সদস্য এনিয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার ৯ বছরেও প্রকল্পটি তিমিরেই রয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বগুড়ার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্বোধনের সাথে আরও ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্প রয়েছে। এটি তিনি স্বউদ্যোগে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় জেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কসংলগ্ন শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের পাঁচটি মৌজার ২৫১ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের কাজ স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ ১৯৮২ এ নোটিশ দেওয়া হয়।
বগুড়ার শাজাহানপুরের জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগ্রাম, চকভ্যালী এই পাঁচ মৌজার ২৫১ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মালিকদের তিন ধারায় নোটিশ দেওয়া হয়। এর পর সকল প্রক্রিয়া মেনে ৬ ধারা অর্থাৎ জমির স্বত্ত্বের দাবি নিয়ে শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়। এ অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৪ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত ১৩৫ টি আবেদনের শুনানী নিস্পত্তি করার কথা ছিল।
ওই আবেদন নিষ্পত্তি হলে সংশ্লিষ্ট মৌজার জমি কেনা বেচার এক বছরের দাম গড় করে মৌজামূল্য নির্ধারণ করার কথা ছিল। কিন্তু জমির ক্ষতিপূরণের পরিমান নিয়ে জমির মালিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জমির মালিকদের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালের আওতায় নোটিশ দেওয়ায় ভূমি মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন মৌজা মূল্যের দেড় গুণ।
ক্ষতিপূরণ দেড়গুণ নিয়ে বেঁকে বসেন জমির মালিকেরা। তারা ২০১৭ সালের সংশোধিত আইনে ক্ষতিপূরণ তিন গুণ দাবি করেন। এ ব্যাপারে তারা ভূমি অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। একাধিক জমির মালিক ক্ষতিপূরণ দেড়গুণ থেকে তিন গুন করতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ভূমি মালিকদের পক্ষে রায় দেন।
এর আগে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ দেড়গুণ নাকি তিনগুণ দেওয়া হবে, তা নিয়ে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম জটিলতা দেখা দেয়। এ নিয়ে প্রায় ৩ বছর কেটে যাওয়ার পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বেজার পক্ষ থেকে প্রকল্পটি লাভজনক হবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথা বলা হয়।
তার কয়েক মাস পর বেজার ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা জানিয়ে তা ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছিল। তবে ঘোষিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করার আগেই বেজা কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকায় হাইভোল্টেজ বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইন নতুন প্রতিবন্ধক হিসেবে তুলে ধরে।
পরবতীতে আবার সিদ্ধান্ত হয় বগুড়া নাটোর সড়কের পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় পাশ থেকে জমি অধিগ্রহন করা হবে। অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হলেও ভূমি মালিকদের কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। বগুড়া চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন জানান, বগুড়ায় বিচ্ছিন্নভাবে শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। এতে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। কৃষি জমি ঠিক রেখে এক স্থানে আর্থিক সেবা থেকে শুরু করে সব শিল্প কারখানা যাতে গড়ে ওঠে সে জন্য অর্থনৈতিক শিল্পঅঞ্চল বাস্তবায়ন করা জরুরি।
তিনি বলেন উদ্যেক্তারা উদ্বিগ্ন, শিল্পাঅঞ্চল বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তিনি আশা করছেন বর্তমান সরকারের প্রথম দিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন হবে।
বগুড়া শহরের উপশহর নিবাসী প্রকৌশলী আহম্মেদ আলী মনে করেন, কোন জেলায় দাবি আদায় করতে হলে বা কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার দলীয় এমপিদের এগিয়ে আসতে হয়। এবার বগুড়ার সব আসনেই আওয়ামীলীগ জোটের এমপি রয়েছে।
সে ক্ষেত্রে বগুড়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হওয়ার কথা নয়। এমপিদেরকে সংসদে এবং সংসদের বাইরে কথা বলতে হবে। সংশ্লিষ্ট সচিবদের তাগিদ দিতে হবে। সরকার দলীয় এমপিরা জোর না দিলে কাজ হবে না। আসলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একাগ্রতার অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এবারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করা হবে। তখন বগুড়ারটাও হবে। কয়েকটা একসাথে করার কথা আছে। তবে কখন বা কোন সময়ের মধ্যে হবে এমন তথ্য তার কাছে নেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।